বাস্তব-জগতের সূচক কীভাবে নির্ধারণ/সংজ্ঞায়িত করা হয়

ঘৃণা ও সহিষ্ণুতার মত কিছু ধারণা সঠিকভাবে পরিমাপ করা কঠিন। আপনার অনলাইন ক্যাম্পেইন পরিমাপ করার কিছু বাস্তব উপায় এখানে দেওয়া হলো।

ঘৃণা, চরমপন্থা, সহিষ্ণুতা এবং সহনশীলতার মতো ধারণাগুলো ব্যাখ্যা করা কঠিন। এগুলো মনোভাবগত ধারণা যা বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন লোক ভিন্ন ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে। এরকম মূল্যবোধের ক্ষেত্রে আপনার প্রকল্পের প্রভাব মূল্যায়ন করতে এগুলোকে আপনার সুস্পষ্ট, বাস্তব সূচকে রূপান্তর করতে হবে।

এখানে আমরা ভাবগত ধারণা থেকে শুরু করে বাস্তব সূচকসমূহে যাত্রার মূল বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করছি এবং আপনার অনলাইন প্রচারণা পরিমাপ করার কিছু সুস্পষ্ট উপায় বলে দিচ্ছি।

ভাবগত ধারণা থেকে …. 

উগ্রবাদ, ঘৃণা ও সহনশীলতার মতো ধারণাসমূহের সীমানা পরিষ্কারভাবে সংজ্ঞায়িত করা দরকার  যাতে আমরা সেগুলো কার্যকরভাবে পরিমাপ করতে পারি। আসুন মনে করি যে আমরা একটি ধর্মীয় ফেসবুক গ্রুপে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি সহনশীলতা পরিমাপ করতে চাই। আমরা কি ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ডাককেই কেবল অসহিষ্ণুতার চিহ্ন হিসাবে গণ্য করি নাকি আমরা প্রকাশ্যে আপত্তিকর মন্তব্যকেও অন্তর্ভুক্ত করি? সেই সাথে সহনশীলতার চিহ্নগুলো কী কী? আমরা কি কেবল ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার প্রকাশক বাক্য আশা করছি, নাকি আমরা এর উল্টোটাও বিবেচনায় নিচ্ছি? সহিষ্ণুতা বা অসহিষ্ণুতা নির্ণায়ক কেবল একটি নাকি সব ধরনের মতামত বিবেচনায় নিলে আমাদের মূল্যায়নের ফলাফল উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন হতে পারে।

…বাস্তব-জগতের  সূচকে

সহনশীলতার ধারণাটিকে বাস্তব-জগতের  সূচকে রূপান্তর করতে সহনশীলতা পরিমাপ করা জানতে হবে। আপনার একটি স্কেল বা মাপকাঠি দরকার। একটি সরল উদাহরণ দেয়া যাক, এমন একটি স্কেল বেছে নিতে পারেন যাতে নিম্নলিখিত মানদন্ডগুলো অন্তর্ভুক্ত থাকে:

স্কেলটির নেতিবাচক পার্শ্ব: 

সহনশীলতা পয়েন্ট –১০ = সহিংসতা উসকে দিলে

–৪ = সামাজিক দূরত্বসৃষ্টিকারী বা ঘৃণা সৃষ্টিকারী মতপ্রকাশ

স্কেলের ইতিবাচক দিকঃ

+১ সহনশীলতার পয়েন্ট = সহাবস্থান প্রকাশক মন্তব্য (“আমি হিন্দু বিরোধী নই”)।

 +১০ = কোনো ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য প্রশংসা সূচক মতপ্রকাশ (“আমি সত্যই খ্রিস্টানদের পছন্দ করি এবং সম্মান করি”)।

মানুষ কী বলছে কেবল তার উপরই পয়েন্ট প্রদান করতে হবে তা নয় বরং তাদের বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপের জন্যও পয়েন্ট বরাদ্দ করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি সহিষ্ণুতা বা অসহিষ্ণুতা সূচক পোস্টের জন্য সুনির্দিষ্ট পয়েন্ট প্রদান করা যেতে পারে। আবার সেই পোস্ট লাইক করা বা শেয়ার করার জন্য পোস্টটি লেখার কারণে যে পয়েন্ট দেওয়া হয়েছিল তার অর্ধেক পয়েন্ট প্রদান করা যেতে পারে। সহনশীলতা, বৈষম্য, লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা, সহিষ্ণুতা, বিশ্বাস বা অন্য যেকোনো ধারণা পরিমাপ করুন আর না করুন, আপনাকে বিভিন্ন কাজে বিভিন্ন পয়েন্ট প্রদান করতে হবে।

আপনার ফলাফল কীভাবে পাবেন তার বাস্তব সমাধান

আপনার কর্মসূচির ফলাফল পরিমাপ করার জন্য সেরা পদ্ধতি খুঁজে পাওয়া কঠিন হতে পারে। আপনার প্রকল্পের জন্য সেরা মূল্যায়ন কৌশল সন্ধান এবং সেরা পরিমাপ পদ্ধতি বাছাই করার জন্য এখানে কিছু পরামর্শ দেয়া হলো।

১. বিদ্যমান পরিমাপ পদ্ধতি ব্যবহার করুন।

ফলাফল পরিমাপের জন্য নিজের পদ্ধতি তৈরি করা যতোটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের দ্বারা তৈরি করা বিদ্যমান এবং প্রমাণিত পরিমাপ পদ্ধতিগুলো নিয়ে গবেষণা করুন এবং সেগুলো থেকে নিজের জন্য বেছে নিন। ঘৃণা এবং এ সম্পর্কিত ধারণা (যেমন- মৌলবাদ, উগ্রবাদ, সহিষ্ণুতা) এর মাত্রা পরিমাপ করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতির লাইব্রেরির খোঁজ করতে পারেন – এই পেইজের নিচ পর্যন্ত স্ক্রল করুন। 

২. পেশাদার গবেষকদের সাথে অংশীদার হোন।

একজন পেশাদার গবেষককে মূল্যায়ন দলে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানানোই বুদ্ধিমানের কাজ। গবেষক এবং সিএসও-দের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা উভয়ের জন্যই উপকারী: আপনি উপাত্ত বিষয়ে পরিকল্পনা, পরিমাপ, বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা পাবেন এবং গবেষকগণ তাদের জ্ঞানকে বাস্তব-বিশ্বের সমস্যাগুলোতে প্রয়োগ করার সুযোগ পাবেন। নৈতিকতা ও সুরক্ষামুলক বাধাসমূহের উপর নির্ভর করে তারা পাঠদান ও গবেষণার জন্য কিছু ডেটা ব্যবহার করতে পারেন।

৩. আপনার ফলাফল পরিমাপ করতে একটি মিশ্র পদ্ধতি ব্যবহার করুন। 

এর অর্থ হচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন মূল্যায়ন পদ্ধতি থেকে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের উপাত্ত সংগ্রহ করা। আপনার অনলাইন কনটেন্টে কতগুলো লাইক, শেয়ার ও কমেন্ট হয়েছে তা আপনি দেখতে পারেন। আপনার কনটেন্ট সম্পর্কে আপনার দর্শক-শ্রোতাদের ধারণা কী তা জিজ্ঞাসা করতে আপনি একটি অনলাইন জরিপও চালাতে পারেন। আপনি জুম ব্যবহার করে বা ব্যক্তিগতভাবে আপনার দর্শক-শ্রোতাদের সাক্ষাৎকার নিতে পারেন এবং তাদের নিজস্ব ভাষায় তাদের মতামত নিতে পারেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ক্যাম্পেইনের অনেকগুলো ভালো মূল্যায়নের জন্য একটি মিশ্র পদ্ধতি পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়।

এই সহজ “ফলপ্রসু সাক্ষাৎকার গ্রহণের জন্য চেকলিস্ট” গাইড হিসেবে ব্যবহার করুন।

ফলপ্রসু সাক্ষাৎকার পরিচালনার জন্য চেকলিস্ট

PDF

৪. কর্মসুচির স্টেকহোল্ডারের সাথে আপনার মূল্যায়ন পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করুন।

আমাদের পরামর্শ হচ্ছে ফোকাস গ্রুপ বা গোল টেবিল আলোচনায় নির্বাচিত স্টেকহোল্ডারদের সাথে আপনার মূল্যায়ন পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করুন। আপনার মূল্যায়ন পরিকল্পনা বর্ণনা করুন এবং তাদের জিজ্ঞাসা করুন কী পরিমাপ করতে হবে এবং কীভাবে পরিমাপ করতে হবে। তাদের ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি আপনার মূল্যায়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা প্রদান করতে পারে। এই ধরনের পরামর্শ গ্রহণ আপনার প্রকল্পের জন্য সুনামও বয়ে নিয়ে আসতে পারে, কারণ আপনার স্টেকহোল্ডাররা আপনি কী করছেন তা আরো ভালভাবে বুঝতে পারবেন এবং তারা অনুভব করবেন যে তারা এই উদ্যোগের অংশ।

আপনার স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কমিউনিটির সদস্যগণ, সরকারী প্রতিনিধি, প্রভাবশালী নাগরিক এবং কর্মী অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। 

কোনো সংকট অথবা সংঘাতকালে মূল্যায়ন পরিচালনা করার সময় কী কী জিনিস বিবেচনা করবেন তার একটি সহজ ইনফোগ্রাফিক এখানে দেখুন।

সংকট ও সংঘাতকালে মূল্যায়ন পরিচালনা

PDF

অবদান রেখেছেন Professor Greg Barton এবং Dr Matteo Vergani, Alfred Deakin Institute for Citizenship and Globalisation, Deakin University.

ফেসবুকের মাধ্যমে আমাদের কমিউনিটির সাথে যুক্ত থাকুন

সক্রিয় থাকুন এবং আমাদের ফেসবুক পেজের মাধ্যমে আমাদের বৃহত্তর কমিউনিটির সাথে যুক্ত থাকুন।

Go to Facebook