গল্প বলার ক্ষমতা

কীভাবে আপনার সংস্থার স্টোরি/গল্পকে প্রকৃতপক্ষে শক্তিশালী বানাবেন যা আপনার সংস্থা সম্পর্কে মানুষের এখনকার ধারণার বিপরীত হবে অথবা নতুন আদর্শকে লালন করবে।

আমরা মানুষ হিসেবে পরস্পরের সাথে যেভাবে সম্পর্কিত এবং যেভাবে পরস্পরের সাথে আবেগ শেয়ার করি সেটাই হল গল্প। ছোটবেলায় আমাদের গল্প শোনানো হয় এবং সারাজীবন শিশুদের সেগুলো বলি। রাজনীতিবিদরা তাদের ভিশন সম্পর্কে আমাদের গল্প শোনান এবং ব্যবসায়ীবৃন্দ তাদের ব্র্যান্ড সম্পর্কে গল্প বলেন। আমরা আমাদের আশপাশের মানুষদের কাছে গল্প বলি তাদেরকে শেখানো, বিনোদন দেয়া এবং প্রেরণা জোগানোর জন্য।

মানুষের গল্প বলার এই ক্ষমতা তাকে অন্যান্য প্রাণী থেকে আলাদা করে এবং আমাদের মানবজাতিকে সাফল্যের দিকে পরিচালিতে করে, Sapiens: A brief History of Humankind বইয়ে ইউভাল নোয়াহ হারারি এই কথা বলেছেন। হারারির মূল বক্তব্য হল ভাষা আমাদের এমন জিনিসের বিষয়ে কথা বলার সক্ষমতা প্রদান করে যা বাস্তব নয়।

“মৃত্যুর পর বানরের স্বর্গে অসংখ্য কলা পাওয়া যাবে এই কথা বলে আপনি বানরের কাছ থেকে কখনো কলা নিতে পারবেন না।”  ― Yuval Noah Harari, “Sapiens: A Brief History of Humankind”

গল্প বলার শক্তি মানুষকে খোশগল্প, ইতিহাস চর্চা এবং বিশ্বাসের ভিত্তি তৈরি করার পাশাপাশি টেলিভিশন নাটক ও ভবিষ্যতের স্বপ্ন বুনার সক্ষমতা প্রদান করে। এই ধারণাগুলোর স্থানান্তরের অর্থ আমরা অনেক ধারণা ও মতাদর্শ শেয়ার করতে পারি এবং শেয়ার করি। এটি ইতিবাচক বা নেতিবাচক হতে পারে। কীভাবে লোকজনকে ভ্যাকসিন গ্রহণ বিষয়ে বুঝানো যেতে পারে সে সম্পর্কে ভাবুন। এটি হতে পারে প্রতিটি সমস্যার সাথে সংশ্লিষ্ট গল্পের শক্তির মাধ্যমে। 

আমরা মানুষেরা আমাদের সম্মিলিত বিশ্বাসকেও পরিবর্তন করতে পারি। উদাহরণস্বরূপ, আমরা বুঝাতে পারি যে বর্ণবৈষম্য গ্রহণযোগ্য নয়, মানব পাচার নির্মূল করা দরকার বা মহিলাদের সমান অধিকার থাকা উচিত। আমরা ইতিহাস সম্পর্কে আলোচনা করতে পারি এবং দাসত্বের মতো পূর্ববর্তী মানুষের নিষ্ঠুরতার কথা আলোচনা করতে পারি।

আপনার সংস্থার কাছে এমন গল্প আছে যা বিদ্যমান ধারণার বিপরীতে যেতে পারে অথবা নতুন আদর্শ লালন করতে পারে। গল্পকার হিসেবে, মানুষের অনুভূতি, ভাবনা এবং কাজকে প্রভাবিত করতে খুব গভীর স্তরে আপনার শ্রোতার সাথে যুক্ত হওয়ার আপনার সুযোগ রয়েছে। আপনি কীভাবে আপনার গল্পটিকে সত্যিকার অর্থে শক্তিশালী করবেন সে ব্যাপারে এখানে কিছু কৌশল আছে।

গল্প বলার চারটি ভিন্ন ধরন

গল্প বলার কতিপয় ধরন কোন কোন শ্রোতার কাছে অন্য ধরনের চেয়ে বেশী আবেদন সৃষ্টি করে। একইভাবে কোনটি গল্পকারের জন্য অধিকতর বাস্তবসম্মত। আপনার গল্প বলার চারটি ভিন্ন উপায় এখানে দেওয়া হল।

ভেবে দেখুন, আপনি কীভাবে গল্প বলার ভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন। আপনার শ্রোতাদের নিয়ে ভাবুন এবং গল্প বলার কোন পদ্ধতিটি তারা সবচেয়ে আকর্ষণীয় মনে করেন। তারা কিসে মনোযোগ দিবে? পরিস্থতির উপর ভিত্তি করে, আপনি গল্প বলার পদ্ধতিগুলোর সমন্বয়ও করতে পারেন। 

মৌখিক গল্পবলা

আমরা লিখতে শেখার আগে কথা বলতে শিখেছি। প্রাচীন এবং আধুনিক সকল মানুষের ক্ষেত্রেই এটি সত্য। কিছু কিছু জনগোষ্ঠী যেমন অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে অলিখিত মৌখিক সংস্কৃতি অদ্যাবধি জোরালোভাবে টিকে আছে। সেখানে গান, স্তবক এবং কথ্য গল্প এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের মাঝে চিন্তাধারা চলমান রাখে। 

মানুষের কণ্ঠস্বর, বিশেষ করে কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তির কন্ঠস্বর মানুষ না শুনে পারে না। কল্পনা করুন, আপনার শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে দেয়া একটি সাধারণ বার্তা কতটা শক্তিশালী হতে পারে যদি তা একজন বিখ্যাত এবং অত্যন্ত সম্মানিত গায়কের মুখ থেকে বের হয়। 

পডকাস্ট একটি আধুনিক গল্প বলার মাধ্যম যা আপনার বক্তব্য বহুদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে দিতে পারে। এখানে প্রায়শই একজন সত্যিকারের মানুষ তার গল্প বলে এবং সারা বিশ্বের শ্রোতাদের নিকট পৌঁছে দিতে পারেন। আপনার গল্পটি আপনার শ্রোতাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অডিও সাক্ষাৎকার বা ভয়েস রেকর্ডিং ব্যবহার করতে পারেন। আপনি এমন ধরনের ভয়েস ম্যাসেজ ক্যাম্পেইন চালাতে পারেন যেন শ্রোতারা খুব সহজে তাদের অন্যান্য বন্ধুদের কাছে পাঠাতে পারে। যেসব শ্রোতাদের স্বাক্ষরতার হার কম এটি বিশেষত তাদের জন্য কার্যকর হতে পারে।

ভিজ্যুয়াল স্টোরিটেলিং

প্রাচীন গুহার চিত্রকর্ম এবং এখনকার সময়ের ইনস্টাগ্রাম ফিড উভয় ক্ষেত্রে ছবির মাধ্যমে গল্প বলা হয় অর্থাৎ মানুষ গল্প দেখতে ও অনুসরণ করতে পারে। 

কিছু কাজের পরামর্শ

মনে রাখবেন, একটি বাটন চেপে যে কেউ যেকোনো ছবি তুলতে পারে। কোনো ছবিতে যদি বার্তা থাকে বা ধারাবাহিকভাবে অঙ্কন করা একাধিক চিত্রে যদি কোনো ধারণা থাকে তাহলে তা গল্পে পরিণত হয়। আপনি সেই ছবিগুলো দিয়ে কীভাবে গল্পটি বলছেন সেটা অবশ্য একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেটাই গল্প বলার প্রকৃত কৌশল বা শিল্প।

লিখিত মাধ্যমে গল্প বলা

ছাপাখানাগুলো লিখিত শব্দকে গণসংযোগের মাধ্যম হিসেবে পরিণত করে। গল্প বলার নতুন ধরন যেমন- উপন্যাস, প্রবন্ধ, সংবাদপত্র এবং পোস্টারের মাধ্যমে বলা কোন গল্প বিশাল সংখ্যক শ্রোতাদের কাছে পৌঁছে যেতে পারে।

হাতে লেখারও একটি বিশেষ ক্ষমতা আছে। মজার ও হাস্যকর প্রতিবাদের চিহ্নগুলো দুর্দান্ত। হাতে-লেখার ছবি আপনার কথায় যে মানবীয় আবেগ এবং ব্যক্তিত্বের স্পর্শের সংযোগ ঘটায় সেটি কীবোর্ডের লেখা পারে না। 

ডিজিটাল পদ্ধতিতে গল্প বলা

স্মার্টফোন বিশ্বকে পরিবর্তন করে দেয়ার মতো একটি ডিভাইস হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে যা কিনা লেখা ও ছবি, ভিডিও ও শব্দকে একত্র করে নজিরবিহীন গল্প বলার হাতিয়ারে পরিণত করেছে। মুদ্রণযন্ত্র, প্রকাশক বা চলচ্চিত্র প্রযোজকের কাজগুলোকে একত্রে আমাদের হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে।

প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে তাদের নিজস্ব গল্প বলছে। এখন সবাই গল্পকার। 

সামাজিক মাধ্যম গতিময়, সৃজনশীল এবং সহজে খাপ খাওনোর মত মাধ্যম। বড় গল্প বলার জন্য ব্লগ লেখাই ভাল। এতে বেশি শব্দ ব্যবহার করা যায়। সংক্ষিপ্ত, গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য এবং বিশ্লেষণের জন্য টুইট দুর্দান্ত রকমের ভালো। তবে অনেকেই একাধিক পোস্টের মধ্যে যোগসূত্র তৈরি করে বড় গল্প বলার মতো সীমিত-লেখার ধরন আবিস্কার করেছে। অন্যান্য প্ল্যাটফর্মেও এটি ঘটে। ব্যবহারকারীরা গল্প বলার জন্য নতুন নতুন উপায় বের করেন।

গল্প বলার ৪টি সূত্র

সব ভাল গল্পের চারটি সাধারণ গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে। আপনার চারপাশের গল্পগুলো খুঁজলেই পাবেন হোক সেটা নেটফ্লিক্সের নাটক অথবা আপনার প্রতিবেশীর কাছ থেকে শোনা কোন গল্প। সেগুলো সম্পর্কে জানতে এই ভিডিওটি দেখুন।

গল্প বলার ৪টি সূত্র

ফেসবুকের মাধ্যমে আমাদের কমিউনিটির সাথে যুক্ত থাকুন

সক্রিয় থাকুন এবং আমাদের ফেসবুক পেজের মাধ্যমে আমাদের বৃহত্তর কমিউনিটির সাথে যুক্ত থাকুন।

Go to Facebook