সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে আপনার জন্য কার্যকর করে তুলুন
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সর্বোত্তম ফলাফল পেতে আপনাকে সহায়তা করতে কৌশলগত পরামর্শ।
আপনি যেসব লোকদের সাহায্য করার চেষ্টা করছেন তাদের ক্ষমতায়নের জন্য যেখানে আলোচনা হচ্ছে সেখানে আপনাদের মত সুশীল সমাজ সংস্থাসমূহ (CSOs) থাকা প্রয়োজন। সোশ্যাল হোন! বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ পরস্পরের সাথে সংযুক্ত হতে, তাদের আইডিয়া, মতামত, তথ্য এবং পণ্য শেয়ার ও বিনিময় করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করছেন। সঠিক লোকজনের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে এবং অনলাইন ও অফলাইন কমিউনিটি তৈরি এবং তাদের সাপোর্ট করতে এটি একটি অত্যন্ত কার্যকর উপায়।
একজন প্রকাশক হওয়া কখনোই সহজ ছিল না। আজকাল যে কেউ ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে অনলাইনে গিয়ে নিজের মতামত, ছবি, এবং সাধারণ চিন্তাধারা ইলেক্ট্রনিকভাবে শেয়ার করতে পারে। আপনার দীর্ঘ প্রবন্ধগুলো পোস্ট করার জন্য একদল মানুষের আর প্রয়োজন নেই। মোবাইল ফোনগুলো বেশ শক্তিশালী রেকর্ডিং যন্ত্র এবং পাবলিশিং টুল।
গতানুগতিক মিডিয়াগুলোর মতো সোস্যাল মিডিয়াতেও সংবাদ সংগ্রহ ও শেয়ার করা, দর্শকদের সাথে যোগাযোগ করা এবং পরিবর্তনের পক্ষে কাজ করার সুযোগ আছে। তবে গতানুগতিক মিডিয়ার মতো নয়, সোস্যাল মিডিয়া/সামাজিক মাধ্যম একটি গতিশীল মাধ্যম! এটি অত্যন্ত ইন্টার্যাক্টিভ বৈশ্বিক অথবা আঞ্চলিক সামাজিক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রচুর রিচ সহ রিয়েল টাইমে অপারেট করে। স্বল্প প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সহজে ইন্টারফেসগুলো ব্যবহার করা যায় এবং সেগুলো ফ্রী অথবা তুলনামূলকভাবে সুলভ মূল্যে পাওয়া যায়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের টুলগুলো কার্যকরভাবে ব্যবহার করার মূল উপায় হলো সুকৌশলী হওয়া। আপনার কৌশলকে উন্নত করতে এবং সর্বোত্তম ফলাফল পেতে কিছু পরামর্শ দেওয়া হলো।
শুরু করতে ভয় পাবেন না।
কোনো “নতুন টেকনোলজি”-কে ভয় পাবেন না। এটা সহজে ব্যবহার করার মতো করে তৈরি করা হয়েছে এবং আপনি এটা একবার ব্যবহার করা শুরু করলে দ্রুত এর ব্যবহার শিখতে থাকবেন। মনে রাখবেন, এটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, পেশাদার গণমাধ্যম নয়!
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনার কোনো অ্যাকাউন্ট না থাকলে আপনি যেই প্ল্যাটফর্মে কাজ করবেন সেখানে আপনার নিজস্ব একটি অ্যাকাউন্ট খুলে নিজেকে পরিচিত করুন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে থাকলে মানুষ অনলাইনে কেমন আচরণ করে এবং কীভাবে যোগাযোগ করে তা বুঝতে আপনার জন্য সহায়ক হবে।
কৌতূহলী হোন। বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের সুবিধা ও সীমাবদ্ধতাগুলো অনুসন্ধান করুন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ল্যান্ডস্কেপের ব্যাপারে সতর্ক হলে তা আপনি কীভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করবেন সে ব্যাপারে অবগত সিদ্ধান্তসমূহ নেওয়ার ক্ষেত্রে আপনাকে সাহায্য করবে।
একটি পরিকল্পনা রাখুন
এটি “সামাজিক” যোগাযোগ মাধ্যম হলেও এটি সামাজিক হওয়া থেকেও আরও বেশি কিছু। আপনার বার্তাটি কার্যকরভাবে সঠিক মানুষদের কাছে পৌঁছানোর জন্য একটি স্পষ্ট এবং ধারাবাহিক কৌশল থাকতে হবে।
- আপনি অনলাইনে কি অর্জন করতে চান?
- আপনি কাদের সাথে কথা বলতে চান, এবং সবচেয়ে ভালো কোন উপায়ে তাদের পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেন?
- আপনি তাদের কী বলতে চান?
আপনার কৌশল উন্নত করার সর্বোত্তম উপায় হলো প্রতিটি প্রশ্নে নিয়মানুযায়ী কাজ করা। “আপনার সোশ্যাল মিডিয়া স্ট্র্যাটেজি কীভাবে তৈরি করবেন” -তে একটি সহজ ওয়ার্কশীট রয়েছে যা আপনাকে ঠিক সেটি করতেই সহায়তা করবে।
আপনার টার্গেট অডিয়েন্স/শ্রোতা শনাক্ত করুন
আপনার দর্শক সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না থাকটা একটি সাধারণ ভুল। অপর একটি ভুল হলো “প্রত্যেক” কে দর্শক ভেবে নেওয়া। এটি অত্যন্ত বিস্তৃত ও সাধারণ একটি ভুল।
আপনার টার্গেট অডিয়েন্স/শ্রোতা কোন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছেন, তারা কোন ধরনের কন্টেন্ট দেখছে, এবং তাদের সাথে সংযুক্ত হওয়ার সর্বোত্তম উপায় কি তা জানতে স্পষ্টভাবে আপনার টার্গেট অডিয়েন্স/শ্রোতা শনাক্ত করাটা জরুরি।
আপনি নিজেকে নিজেই জিজ্ঞাসা করুন যে আপনার বার্তা আপনি কার সাথে শেয়ার করবেন। সেই মানুষগুলো কারা? আপনি কোন ধরনের হৃদয় ও মনের মানুষের সাথে সংযুক্ত হতে চান? আপনি কার মতামত এবং আচরণ প্রভাবিত করতে চান?
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পুরোটাই হলো ভার্চুয়াল কমিউনিটিতে চিন্তা-ধারা, ধারণা, এবং তথ্য শেয়ার করা। যদিও এইসব কমিউনিটিগুলো হঠাৎ করেই তৈরি হয় না। আপনাকে এগুলো তৈরি করতে হবে এবং পরিচালনা করতে হবে। এইজন্য আপনার কমিউনিটি তৈরি ও বৃদ্ধি করতে প্রথমেই সঠিক ব্যক্তির সাথে কথা বলাটা জরুরি।
এই ব্যাপারে আরও পড়ুন এখানে “আপনার সোশ্যাল মিডিয়া স্ট্র্যাটেজি কীভাবে তৈরি করবেন”।
পছন্দ করার ক্ষেত্রে সতর্ক হোন
বাছাই করার জন্য অনেকগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম রয়েছে। চিন্তার কোন কারণ নেই, এগুলোর সবগুলোতেই আপনার থাকার প্রয়োজন নেই। আপনার প্রচেষ্টা ও সময় কম ফলপ্রসূ করার চেয়ে একটি বা দুটি প্ল্যাটফর্ম ভালোভাবে ব্যবহার করা উত্তম।
আপনি যেসব মানুষের কাছে পৌঁছাতে চাচ্ছেন তাদের কাছে কোন প্ল্যাটফর্মটি সবচেয়ে জনপ্রিয় তা আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে। তারা কোন সোশ্যাল মিডিয়া/সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করছে? আপনি একবার তা জেনে গেলে সেসব মানুষদের সাথে সংযোগ করতে সঠিক বার্তা লেখার উপর ফোকাস করতে পারেন।
একটি প্ল্যাটফর্ম দিয়ে শুরু করে প্রথমে সেটিতেই মনোনিবেশ করাটা সর্বোত্তম।
আরও পড়ুন এখানে “সঠিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বাছাইয়ের জন্য সবচেয়ে ভাল পরামর্শসমূহ.”
অফলাইন এবং অনলাইন যোগাযোগ মাধ্যমের যুগপৎ ব্যবহার
আপনি গতানুগতিক মিডিয়া এবং সোস্যাল মিডিয়া উভয়ই একসাথে ব্যবহার করতে পারেন। অনলাইন ক্যাম্পেইন/প্রচারাভিযান আপনার বিদ্যমান গতানুগতিক মাধ্যম গুলোর পরিপূরক হতে পারে। তবে আপনার যোগাযোগের উদ্দেশ্য অনুসারে কোন মাধ্যমটি সবচেয়ে ভাল কাজ করবে তা বুঝতে ও নির্বাচন করতে হবে। কখনো কখনো সরাসরি স্ট্রিট ক্যাম্পেইন এর মাধ্যমে লোকজনের সাথে যোগাযোগ করা অনলাইন নিউজলেটার ক্যাম্পেইনের চেয়ে অধিক কার্যকর হতে পারে। কেন? আপনার নিউজলেটারটি তৈরি করতে আপনি হয়তো প্রচুর সময় ব্যয় করলেন এবং অনেক পরিশ্রম করলেন এবং অবশেষে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করলেন। পরে আবিষ্কার করলেন যে আপনার নিউজলেটারটি খুব কম লোকই খুলেছে এবং পড়েছে। প্রতিটি পরিস্থিতি আলাদা এবং একটি আরেকটি থেকে ভিন্ন। তাই আপনাকে প্রতিটি পরিস্থিতি মূল্যায়ন করেই উপযুক্ত ও অধিক কার্যকর যোগাযোগ কর্মসূচি নির্বাচন করতে হবে। এটা অনলাইন, অফলাইন বা উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হতে পারে।
নেপালে একটি স্বাক্ষরতা প্রোজেক্টের জন্য কিভাবে অনলাইন এবং অফলাইন উভয় ধরনের যোগাযোগকে একত্র করা হয়েছিল তার একটি উদাহরণ এখানে দেওয়া হল। বাছাইকৃত সংখ্যালঘু ভাষায় শিশুদের বই তৈরি করা হয়েছিল ও Let’s Read প্ল্যাটফর্মে আপলোড করা হয়েছিল এবং গল্পের বইগুলোর নির্দিষ্ট কিছু কপি নেপালের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রকাশিত ও সরবারহ করা হয়েছিল।
ই-বুকগুলোও ডাউনলোড করে প্রিন্ট করার যায়। ভাষাগতভাবে বৈচিত্র্যপূর্ণ নেপালে, আদিবাসী ও সংখ্যালঘু জাতির শিশুদের জন্য তাদের নিজস্ব ভাষায় পড়ার সুযোগ পাওয়া খুব কঠিন। Let’s Read Nepal সংখ্যালঘু থারু ভাষার শিশুদের জন্য ছয়টি সচিত্র বই প্রকাশ করেছিল। নেপালি ও ইংরেজি ভাষায়ও গল্প প্রকাশিত হয়েছিল, এবং বিল্ড-ইন Let’s Read নামক অনুবাদ টুলের সাহায্যে বইগুলো অন্যান্য অনেক ভাষায় অনুবাদও করা যায়।
এটি প্রচলিত মাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একত্রে কাজ করার একটি উদাহরণ। এই প্রোজেক্ট সম্পর্কে আরও পড়ুন এখানে এবং অনুসন্ধান করুন Let’s Read প্ল্যাটফর্ম।