সেকশন ২: আপনার টার্গেট অডিয়েন্সের/শ্রোতার সাথে কীভাবে যোগাযোগ করবেন

সিএসও-র সোশ্যাল মিডিয়ার/সামাজিক মাধ্যমের জন্য পর্যায়ক্রমিক নির্দেশনা

ভাল যোগাযোগ মানুষের সাথে সম্পর্ক তৈরি করে। এই অধ্যায়ে কীভাবে দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হয় এবং আপনার বার্তা বা ম্যাসেজ কীভাবে তাদের সাথে যোগসূত্র স্থাপন করবে তা দেখানো হয়েছে।

ইন্টারনেট প্রকাশনার জগতে গণতন্ত্র নিয়ে এসেছে। এখন আর আপনার বিশেষ সরঞ্জাম, দক্ষতা বা বিতরণ চ্যানেলের প্রয়োজন নেই। সঠিক সরঞ্জাম দেওয়া হলে এখন যে কেউ অনলাইনে স্থান করে নিতে পারেন এবং কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই প্রকাশক হতে পারেন। তাই বিশ্বে উপাত্তের পরিমাণ দ্রুত বাড়ছে। কিন্তু কোনো কিছু ইন্টারনেটে থাকার অর্থ এই নয় যে সেটি যোগাযোগের জন্য একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। 

ভাল যোগাযোগ মানুষের সাথে সম্পর্ক তৈরি করে। এটি তাদের উপর প্রভাব ফেলে এবং কোনবার্তার (ম্যাসেজের) প্রতিক্রিয়ায় তাদের চিন্তা করতে, অনুভব করতে বা কাজ করতে বাধ্য করে।

আপনার প্রকাশিত প্রতিটি তথ্যের মাধ্যমে ভাল যোগাযোগ স্থাপন করা আপনার লক্ষ্য হওয়া উচিত। কোন ব্যক্তিই এমন কিছু তৈরি করে তার সময়, শ্রম, বা সম্পদ অপচয় করতে চায় না যা মানুষ পড়বে না বা দেখবে না।

এই অধ্যায়ে কীভাবে দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হয় এবং আপনার বার্তা বা ম্যাসেজ কীভাবে তাদের সাথে যোগসূত্র স্থাপন করবে তা দেখানো হয়েছে।

আপনার শ্রোতাদের সম্পর্কে জানুন

প্রত্যেকেই আপনার অডিয়েন্স/শ্রোতা নয়! যদি আমরা বলি যে প্রত্যেকেই আমাদের কাঙ্খিত দর্শক/শ্রোতা তাহলে ইন্টারনেটের প্রায় ৮০০ কোটি মানুষের সবাইকেই বোঝাবে! কিন্তু তারা সবাই আপনার আলোচনায় আগ্রহী নয়। 

আপনার শ্রোতা কে এবং কেনো আপনি তাদের সাথে যোগাযোগ করতে চান সে ব্যাপারে আপনার ধারণা পরিষ্কার কিনা নিশ্চিত করা দরকার। তারা কী ধরনের মানুষ তা নিয়ে ভাবুন; যেমন, তারা কী করতে বা দেখতে পছন্দ করে, তারা কিসে অনুপ্রাণিত হয়। এই তথ্য আপনার আলোচ্য ম্যাসেজের সাথে আপনার শ্রোতাকে সংযুক্ত করার একটি উপায় খুঁজে বের করতে সহায়তা করবে। 

আপনার শ্রোতাদের দৈনন্দিন জীবন বা অভিজ্ঞতার বিভিন্ন দিকের সাথে সংযোগ স্থাপন করে এমন কোনো বার্তা আপনি কীভাবে দিতে পারেন? আপনার কাঙ্খিত শ্রোতাদের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে এরূপ একজন সদস্যের “জীবনের একটি দিন” কীভাবে কাটে তার একটি রূপরেখা তৈরি করা একটি ভাল পন্থা হতে পারে। তারা একটি বিশেষ দিনে যা করে বলে আপনার মনে হয় সে ব্যাপারে লিখুন। এটি আপনাকে তাদের সাথে সংযোগ স্থাপনের জন্য কিছু অনুপ্রেরণামূলক উপায় বাতলে দিতে পারে। যদি তারা খুব সকালে অনলাইনে থাকে, তবে আপনার কনটেন্ট পোস্ট করার জন্য সেটাই হতে পারে উত্তম সময়। যদি তারা ফুটবল অনুরাগী হয়, তবে তাদের প্রিয় ফুটবল খেলোয়াড়দের উপস্থাপন করলে আপনার অনলাইন ক্যাম্পেইনের জন্য সহায়ক হবে। 

আপনার শ্রোতাদের সম্পর্কে আরো ভালভাবে জানতে পারলে তারা কী ধরনের বার্তায় প্রতিক্রিয়া জানাবে সেটা উপলদ্ধি করতে এবং শেষ পর্যন্ত তাদের উপর প্রভাব তৈরি করতে আপনাকে সহায়তা করবে।

তাদেরকে নিবিষ্ট করে এমন জোরালো গল্প বলুন

আমরা মানুষ হিসেবে পরস্পরের সাথে যেভাবে সম্পর্কিত এবং যেভাবে পরস্পরের সাথে আবেগ শেয়ার করি সেটাই হল গল্প। ছোটবেলায় আমাদের গল্প শোনানো হয় এবং সারাজীবন শিশুদের সেগুলো বলি। রাজনীতিবিদরা তাদের ভিশন সম্পর্কে আমাদের গল্প শোনান এবং ব্যবসায়ীবৃন্দ তাদের ব্র্যান্ড সম্পর্কে গল্প বলেন। আমরা আমাদের আশপাশের মানুষদের কাছে গল্প বলি তাদেরকে শেখানো, বিনোদন দেয়া এবং প্রেরণা জোগানোর জন্য।

দর্শক/শ্রোতাদের সাথে সংযোগ ঘটাতে “কীভাবে সোশ্যাল মিডিয়ার সাথে বাস্তব জীবনের সংযোগ করবেন” অংশে গল্প বলার যে ক্ষমতার কথা জেনেছেন সেটি কাজে লাগান। ইতিবাচক পরিবর্তনকে অনুপ্রাণিত করতে আপনার দর্শকদের হৃদয়ের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। আপনার ম্যাসেজ বা বার্তা যেন তাদের হৃদয়ে আবেদন সৃষ্টি করে।

গল্প বলার “৪টি সূত্র”

সব ভাল গল্পের চারটি সাধারণ গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে।

মানুষ

গল্পে কে আছে? মানুষের একটি চরিত্র শ্রোতাদের সাথে সংযোগ স্থাপনের সর্বোত্তম উপায়। কারণ তারা চরিত্রটির সাথে কী ঘটতে চলেছে সে সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে উঠে। 

স্থান 

ঘটনাটি কোথায় ঘটছে? স্থান আপনার চরিত্র এবং গল্পের গভীরতা সৃষ্টি করে। আপনি অল্প সময়ের মধ্যে প্রচুর তথ্য দৃশ্যমান উপায়ে প্রদান করতে এটি ব্যবহার করতে পারেন। 

কাহিনীসূত্র

আপনার গল্পের মোড় বা দ্বন্দ্বটি কী? প্রকৃতপক্ষে ভাল চলচ্চিত্রগুলো আপনাকে অবাক করে দেয়। এগুলোতে এমন মোড় থাকে যা আপনি আশা করেননি। পাঠককে অনুমান করতে বাধ্য করার জন্য আপনার গল্পে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করুন অথবা তাদের এমন কিছু জানান যা তারা জানে না। চিন্তার উদ্রেক করে এমন ধরনের ঘটনা বা বিবৃতি (যেমন, “চরমপন্থা কাজে আসে না” বা “সহিংসতা আপনার দুর্বলতা প্রকাশ করে!”) দিয়ে আপনার গল্প শুরু করতে পারেন!

উদ্দেশ্য

পাঠক আপনার গল্পকে গুরুত্ব দিবে কেন? বিষয়টি কেন গুরুত্বপূর্ণ তা আপনার শ্রোতাদের অবহিত করুন।

গল্প বলার চারটি ভিন্ন ধরন

গল্প বলার কতিপয় ধরন কোনো কোনো শ্রোতার কাছে অন্যান্য ধরনের চেয়ে বেশি আবেদন সৃষ্টি করে। একইভাবে কোনোটি গল্পকারের জন্য অধিকতর বাস্তবসম্মত। আপনার গল্প বলার চারটি ভিন্ন উপায় এখানে দেওয়া হল।

মৌখিক গল্পবলা

আমরা লিখতে শেখার আগে কথা বলতে শিখেছি। প্রাচীন এবং আধুনিক সকল মানুষের ক্ষেত্রেই এটি সত্য। কিছু কিছু জনগোষ্ঠী যেমন অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে অলিখিত মৌখিক সংস্কৃতি অদ্যাবধি জোরালোভাবে টিকে আছে।

সেখানে গান, স্তবক এবং কথ্য গল্প এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের মাঝে চিন্তাধারা চলমান রাখে। মানুষের কণ্ঠস্বর, বিশেষ করে কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তির কন্ঠস্বর মানুষ না শুনে পারে না। কল্পনা করুন, আপনার শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে দেয়া একটি সাধারণ বার্তা কতটা শক্তিশালী হতে পারে যদি তা একজন বিখ্যাত এবং অত্যন্ত সম্মানিত গায়কের মুখ থেকে বের হয়। 

পডকাস্ট একটি আধুনিক গল্প বলার মাধ্যম যা আপনার বক্তব্য বহুদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে দিতে পারে। এখানে প্রায়শই একজন সত্যিকারের মানুষ তার গল্প বলে এবং সারা বিশ্বের শ্রোতাদের নিকট পৌঁছে দিতে পারেন। আপনার গল্পটি আপনার শ্রোতাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অডিও সাক্ষাৎকার বা ভয়েস রেকর্ডিং ব্যবহার করতে পারেন। আপনি এমন ধরনের ভয়েস ম্যাসেজ ক্যাম্পেইন চালাতে পারেন যেন শ্রোতারা খুব সহজে তাদের অন্যান্য বন্ধুদের কাছে পাঠাতে পারে। যেসব শ্রোতাদের স্বাক্ষরতার হার কম এটি বিশেষত তাদের জন্য কার্যকর হতে পারে।

ভিজ্যুয়াল স্টোরিটেলিং

প্রাচীন গুহার চিত্র এবং এখনকার সময়ের ইনস্টাগ্রাম পোস্ট উভয় ক্ষেত্রেই ছবির মাধ্যমে গল্প বলা হয়। অর্থাৎ মানুষ গল্প দেখতে এবং অনুসরণ করতে পারে। আমরা অনেকেই বই পড়ে যত না দ্রুত শিখতে পারি তার চেয়ে ছবি দেখে আরো দ্রুত শিখতে পারি। ক্যামেরা দিয়ে তোলা ছবি বা হাতে আঁকা চিত্র দ্রুত জ্ঞান ও মনের আবেগ প্রকাশ করতে পারে এবং কোনো কিছু সম্পর্কে আমাদের আলাদাভাবে চিন্তা করতে সাহায্য করে।

চিত্র এঁকে গল্প বলা অত্যন্ত শক্তিশালী এবং কার্যকর। যে কেউ একবার একটি বাটন চেপে একটি ছবি তুলতে পারেন। কোনো ছবিতে যদি বার্তা থাকে বা ধারাবাহিকভাবে অঙ্কন করা একাধিক চিত্রে যদি কোনো ধারণা থাকে তাহলে তা গল্পে পরিণত হয়। আপনি সেই ছবিগুলো দিয়ে কীভাবে গল্পটি বলছেন সেটা অবশ্য একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেটাই গল্প বলার প্রকৃত কৌশল বা শিল্প।

আপনার কাঙ্খিত দর্শকদের সাথে মানসিক সংযোগ স্থাপনের জন্য চিত্রাঙ্কনের মাধ্যমে গল্প বলা একটি ভাল উপায়। অল্প শিক্ষিত শ্রোতাদের জন্যও এটি কার্যকর।

লিখিত মাধ্যমে গল্প বলা

ছাপাখানাগুলো লিখিত শব্দকে গণসংযোগের মাধ্যম হিসেবে পরিণত করে। গল্প বলার নতুন ধরন যেমন- উপন্যাস, প্রবন্ধ, সংবাদপত্র এবং পোস্টা্রের মাধ্যমে বলা কোন বার্তাকে বিশাল সংখ্যক শ্রোতাদের কাছে পৌঁছে যেতে পারে। 

গভীর বিশ্লেষণের জন্য ব্লগ পোস্টগুলোর কথা চিন্তা করুন। একটি ব্লগ পোস্ট আপনার চাহিদা অনুসারে দীর্ঘ বা সংক্ষিপ্ত হতে পারে। টুইটারে ধারাবাহিক টুইট দর্শকদের জন্য একই কাজ করে।

হাতে লেখারও একটি বিশেষ ক্ষমতা আছে। মজার ও হাস্যকর প্রতিবাদের চিহ্নগুলো দুর্দান্ত। হাতে আঁকা ছবি আপনার বার্তায় যে মানবীয় আবেগ এবং ব্যক্তিত্বের স্পর্শের সংযোগ ঘটায় সেটি কীবোর্ডের লেখা পারে না।

ডিজিটাল পদ্ধতিতে গল্প বলা

স্মার্টফোন বিশ্বকে পরিবর্তন করে দেয়ার মতো একটি ডিভাইস হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে যা কিনা লেখা ও ছবি, ভিডিও ও শব্দকে একত্র করে নজিরবিহীন গল্প বলার হাতিয়ারে পরিণত করেছে। মুদ্রণযন্ত্র, প্রকাশক বা চলচ্চিত্র প্রযোজকের কাজগুলোকে একত্রে আমাদের হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে তাদের নিজস্ব গল্প বলছে। এখন সবাই গল্পকার। সামাজিক মাধ্যম গতিময়, সৃজনশীল এবং সহজে খাপ খাওনোর মত মাধ্যম।

বড় গল্প বলার জন্য ব্লগ লেখাই ভাল। এতে বেশি শব্দ ব্যবহার করা যায়। সংক্ষিপ্ত, গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য এবং বিশ্লেষণের জন্য টুইট দুর্দান্ত রকমের ভালো। তবে অনেকেই একাধিক পোস্টের মধ্যে যোগসূত্র তৈরি করে বড় গল্প বলার মতো সীমিত-লেখার ধরন আবিস্কার করেছে। অন্যান্য প্ল্যাটফর্মেও এটি ঘটে। ব্যবহারকারীরা গল্প বলার জন্য নতুন নতুন উপায় বের করেন।

মনে রাখবেন

শ্রোতাদের সাথে কার্যকর যোগাযোগ স্থাপন করার জন্য আপনাকে:

  • আপনার শ্রোতাদের সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নিতে হবে।
  • আপনার শ্রোতারা কী ভাবে, অনুভব করে এবং কী কাজ করে তা জানার মাধ্যমে তাদের সাথে পরিচিত হতে হবে।
  • এমন জোরালো গল্প বলতে হবে যেন আপনার বক্তব্যের সাথে শ্রোতারা নিজেদের বক্তব্যের মিল খুঁজে পায়। 

ফেসবুকের মাধ্যমে আমাদের কমিউনিটির সাথে যুক্ত থাকুন

সক্রিয় থাকুন এবং আমাদের ফেসবুক পেজের মাধ্যমে আমাদের বৃহত্তর কমিউনিটির সাথে যুক্ত থাকুন।

Go to Facebook