সেকশন ৪: কীভাবে ফলাফল পরিমাপ করবেন

সিএসও-র সোশ্যাল মিডিয়ার/সামাজিক মাধ্যমের জন্য পর্যায়ক্রমিক নির্দেশনা

আপনার কর্মসূচি ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সংস্থা বা সংশ্লিষ্ট কমিউনিটির মধ্যে কতটা পার্থক্য তৈরি করছে তা জানার জন্য পরিমাপ করা গুরুত্বপূর্ণ।

অনলাইন বা অফলাইন আপনি যেখানেই কাজ করেন না কেন, আপনার কর্মসূচি কতটা ফলপ্রসু হল অর্থাৎ আপনার কাজ কীভাবে এবং কতটা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সংস্থা বা কমিউনিটির লোকদের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করছে সেটা বোঝার জন্য পরিমাপ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। 

কেনো পরিমাপ করা গুরুত্বপূর্ণ

আপনার প্রজ্ঞা আপনাকে ইতিবাচক বা নেতিবাচক ফলাফল সম্পর্কে একটি ভাল ধারণা দিতে পারে। কিন্তু একটি প্রকৃত ফলাফল মূল্যায়ন প্রক্রিয়া আপনার কাজের শক্তি এবং দুর্বলতাগুলো সঠিকভাবে সনাক্ত করতে পারে। আপনার সকল কর্মকান্ডের ফলাফল মূল্যায়ন গুরুত্বপূর্ণ হোক সেটা অনলাইন বা অফলাইন, সহজ বা জটিল, সস্তা বা ব্যয়বহুল। 

ফলাফল বড় বা ছোট, দীর্ঘ-মেয়াদী বা স্বল্প-মেয়াদী, ইতিবাচক বা নেতিবাচক, কাঙ্খিত বা অনাকাঙ্খিত যাই হোক না কেনো বেশ কয়েকটি কারণে এই তথ্যটি আপনার জানা দরকার।

১) ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষা।

সুপরিকল্পিত ফলাফল মূল্যায়ন পদ্ধতি আপনাকে বুঝতে সাহায্য করে যে আপনার ক্রিয়াকলাপের কোন দিকগুলো অন্যের চেয়ে ভাল কাজ করেছে এবং কতটুকু ও কেন। এটি আপনার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর দিকে মনোনিবেশ করার ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলবে এবং আপনাকে ভবিষ্যতে কী পরিবর্তন করতে হবে তা আপনাকে জানিয়ে দেবে।

 ২) সময় ও অর্থ বাঁচায়। 

ফলাফল মূল্যায়ন আপনার সময় ও অর্থ সঠিকভাবে ব্যয় হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। বিনিয়োগ থেকে সর্বোচ্চ ফলাফল পেতেও সাহায্য করে।

3) ফান্ডিং/তহবিল পাওয়া আরো সহজ হয়।

ফলাফল মূল্যায়ন আপনাকে চলমান তহবিল ধরে রাখতে, পাশাপাশি নতুন দাতাদের আকর্ষণ করতে সহায়তা করতে পারে। ফলাফলের স্বপক্ষে প্রমাণ সরবরাহ করতে সক্ষম হলে আপনার প্রোগ্রামের কার্যকারিতা এবং গুরুত্ব ভালভাবে তুলে ধরতে সহায়ক হতে পারে পাশাপাশি আপনার প্রকল্প পরিচালনা ও জবাবদিহিতার সক্ষমতা প্রমাণ করতে সহায়তা করে।

 ৪) সামাজিক পরিবর্তনের প্রতিনিধি হওয়া।

ফলাফল মূল্যায়ন খুবই শক্তিশালী কারণ ফলাফল মূল্যায়ন প্রমাণ উপস্থাপন করে যে, আপনি উল্লেখযোগ্য সামাজিক সমস্যা সমাধানে অবদান রাখতে সক্ষম। এই ফলাফল মূল্যায়নই বলে দিবে যে আপনি যা করছেন তা গুরুত্বপূর্ণ।

ফলাফল মূল্যায়ন:

  • বিভিন্ন ক্ষেত্রে যারা আপনার মতো কাজ করতে চান তাদের অনুপ্রাণিত করতে পারে।
  • গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক সমস্যাসমূহ মোকাবেলায় আপনার মতো আরো প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে পারে। 
  • নীতি পরিবর্তনের পক্ষে আওয়াজ তোলার জন্য একটি দরকারী হাতিয়ার হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি প্রমাণ করতে পারেন যে, আপনার ক্যাম্পেইনের ফলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের অনলাইনে ভুল তথ্য ব্যবহার করার সম্ভাবনা হ্রাস করে, তবে এই প্রমাণটি আপনার মতো কর্মসূচিগুলোতে আরো বেশি সরকারী এবং বেসরকারী বিনিয়োগ আকর্ষণ করার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।

ফলাফল মূল্যায়নের ফলে আপনাকে নিজ দেশে এবং বিদেশে এমন একটি বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর নেটওয়ার্কের অংশ হয়ে উঠতে সহায়তা করতে পারে যারা অনুরূপ নীতিগত পরিবর্তনের পক্ষে সোচ্চার। 

ফলাফল পরিমাপ করার উপায়

আপনার কর্মসূচির ফলাফল পরিমাপ করার জন্য সেরা পদ্ধতি খুঁজে পাওয়া কঠিন হতে পারে। আপনার প্রকল্পের জন্য সেরা মূল্যায়ন কৌশল সন্ধান এবং সেরা পরিমাপ পদ্ধতি বাছাই করার জন্য এখানে কিছু পরামর্শ দেয়া হল।

১. বিদ্যমান পরিমাপ পদ্ধতি ব্যবহার করুন।

ফলাফল পরিমাপের জন্য নিজের পদ্ধতি তৈরি করা যতোটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের দ্বারা তৈরি করা বিদ্যমান এবং প্রমাণিত পরিমাপ পদ্ধতিগুলো নিয়ে গবেষণা করুন এবং সেগুলো থেকে নিজের জন্য বেছে নিন। সহিংসতা বা কুসংস্কারের স্তর এবং এ সম্পর্কিত ধারণা (যেমন- মৌলবাদ, উগ্রবাদ, সহনশীলতা) এর মাত্রা পরিমাপ করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতির লাইব্রেরির খোঁজ করতে পারেন – এই পেইজের নীচ পর্যন্ত স্ক্রল করুন।

২. পেশাদার গবেষকদের সাথে অংশীদার হন। 

একজন পেশাদার গবেষককে মূল্যায়ন দলে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানানোই বুদ্ধিমানের কাজ। গবেষক এবং সিএসও-দের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা উভয়ের জন্যই উপকারী: আপনি উপাত্ত বিষয়ে পরিকল্পনা, পরিমাপ, বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা পাবেন এবং গবেষকগণ তাদের জ্ঞানকে বাস্তব-বিশ্বের সমস্যাগুলোতে প্রয়োগ করার সুযোগ পাবেন। নৈতিকতা ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত বাধাসমূহের উপর নির্ভর করে তারা পাঠদান ও গবেষণার জন্য কিছু উপাত্ত ব্যবহার করতে সক্ষম হতে পারেন।

৩. আপনার ফলাফল পরিমাপ করতে একটি মিশ্র পদ্ধতি ব্যবহার করুন। 

এর অর্থ হচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন মূল্যায়ন পদ্ধতি থেকে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের উপাত্ত সংগ্রহ করা। আপনার অনলাইন কনটেন্টে কতগুলো লাইক, শেয়ার ও কমেন্ট হয়েছে তা আপনি দেখতে পারেন। আপনার কনটেন্ট সম্পর্কে আপনার দর্শক-শ্রোতাদের ধারণা কী তা জিজ্ঞাসা করতে আপনি একটি অনলাইন জরীপও চালাতে পারেন। আপনি জুম ব্যবহার করে বা ব্যক্তিগতভাবে আপনার দর্শক-শ্রোতাদের সাক্ষাৎকার নিতে পারেন এবং তাদের নিজস্ব ভাষায় তাদের মতামত নিতে পারেন। স্যোসাল মিডিয়া ক্যাম্পেইনের উত্তম মূল্যায়নের জন্য অনেক সময়ই একসাথে বিভিন্ন পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়।

৪. কর্মসূচির স্টেকহোল্ডারদের সাথে আপনার মূল্যায়ন পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করুন।

আমাদের পরামর্শ হচ্ছে ফোকাস গ্রুপ বা গোল টেবিল আলোচনায় নির্বাচিত স্টেকহোল্ডারদের সাথে আপনার মূল্যায়ন পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করুন। আপনার মূল্যায়ন পরিকল্পনা বর্ণনা করুন এবং তাদের জিজ্ঞাসা করুন কী পরিমাপ করতে হবে এবং কীভাবে পরিমাপ করতে হবে। তাদের ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি আপনার মূল্যায়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা প্রদান করতে পারে। এই ধরণের পরামর্শ গ্রহণ আপনার প্রকল্পের জন্য সুনামও বয়ে নিয়ে আসতে পারে, কারণ আপনার স্টেকহোল্ডাররা আপনি কী করছেন তা আরো ভালভাবে বুঝতে পারবেন এবং তারা অনুভব করবেন যে তারা এই উদ্যোগের অংশ।

আপনার স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কমিউনিটির সদস্যগণ, সরকারী প্রতিনিধি, প্রভাবশালী নাগরিক এবং কর্মী অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।

বাস্তবধর্মী সূচকসমূহের ব্যবহার

উগ্রবাদ, ঘৃণা ও সহনশীলতার মতো ধারণাসমূহের সীমানা পরিষ্কারভাবে সংজ্ঞায়িত করা দরকার যাতে আমরা সেগুলো কার্যকরভাবে পরিমাপ করতে পারি। ধরুন, আমরা একটি ধর্মীয় ফেসবুক গ্রুপে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি সহনশীলতা পরিমাপ করতে চাই। আমরা কি ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ডাককেই কেবল অসহিষ্ণুতার চিহ্ন হিসাবে গণ্য করি নাকি আমরা প্রকাশ্যে আপত্তিকর মন্তব্যকেও অন্তর্ভুক্ত করি? সেই সাথে সহনশীলতার চিহ্নগুলো কী কী? আমরা কি কেবল ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার প্রকাশক বাক্য আশা করছি, নাকি আমরা এর উল্টোটাও বিবেচনায় নিচ্ছি? সহিষ্ণুতা বা অসহিষ্ণুতা নির্ণায়ক কেবল একটি নাকি সব ধরণের মতামত বিবেচনায় নিলে আমাদের মূল্যায়নের ফলাফল উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন হতে পারে।

সহনশীলতার ধারণাটিকে বাস্তব-জগতের সূচকে রূপান্তর করতে আপনাকে সহনশীলতা পরিমাপ করতে জানতে হবে। আপনার একটি স্কেল বা মাপকাঠি দরকার। একটি সরল উদাহরণ দেয়া যাক, এমন একটি স্কেল বেছে নিতে পারেন যাতে নিম্নলিখিত মানদণ্ডগুলো অন্তর্ভুক্ত থাকে:

স্কেলটির নেতিবাচক পার্শ্ব:

 –১০ = সহিংসতা উসকে দিলে

–৪ = সামাজিক দূরত্বসৃষ্টিকারী বা ঘৃণা সৃষ্টিকারী মতপ্রকাশ।

স্কেলের ইতিবাচক দিক 

+১ সহনশীলতার পয়েন্ট = সহাবস্থান প্রকাশক মন্তব্য (“আমি হিন্দু বিরোধী নই”)।

+১০ = কোনো ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য প্রশংসা সূচক মতপ্রকাশ (“আমি সত্যই খ্রিস্টানদের পছন্দ করি এবং সম্মান করি”)

মানুষ কী বলছে কেবল তার উপরই পয়েন্ট প্রদান করতে হবে তা নয় বরং তাদের বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপের জন্যও পয়েন্ট বরাদ্দ করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি সহিষ্ণুতা বা অসহিষ্ণুতা সূচক পোস্টের জন্য সুনির্দিষ্ট পয়েন্ট প্রদান করা যেতে পারে। আবার সেই পোস্ট লাইক করা বা শেয়ার করার জন্য পোস্টটি লেখার কারণে যে পয়েন্ট দেওয়া হয়েছিল তার অর্ধেক পয়েন্ট প্রদান করা যেতে পারে। সহনশীলতা, বৈষম্য, লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা, সহিষ্ণুতা, বিশ্বাস বা অন্য যেকোনো ধারণা পরিমাপ করুন আর না করুন, আপনাকে বিভিন্ন কাজে বিভিন্ন পয়েন্ট প্রদান করতে হবে।

তুলনা গ্রুপের ব্যবহার

দুটি মূল উপাদান রয়েছে যা সম্ভব হলে আপনার মূল্যায়নে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত: পোস্ট করার পূর্বের কর্মসূচি এবং তুলনা গ্রুপ।

পোস্ট করার পূর্বের কর্মসূচির পেছনে যে ধারণাটি কাজ করে তা হল কোনো প্রকল্প শুরু হওয়ার আগে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা এবং প্রকল্প শেষ হওয়ার পরে আবার তা পরীক্ষা করা। উদাহরণস্বরূপ, কোনো দৌড়বিদ একটি নতুন তিন মাস মেয়াদী প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু করার আগে সে তার সর্বোচ্চটা রেকর্ড করতে পারে। আবার তিন মাসের প্রশিক্ষণ শেষে সে তার সর্বোচ্চটা রেকর্ড করতে পারে। এটাই হচ্ছে পোস্ট করার পূর্বের কর্মসূচি। একইভাবে, যদি আপনি জানতে চান যে ফেসবুকে অভিবাসীদের প্রতি বৈষম্য হ্রাস করার জন্য আপনার কর্মসূচি কাজ করেছে কিনা, আপনার কর্মসূচির আগে ও পরে বৈষম্যের মাত্রা পরিমাপ করা উচিত এবং পার্থক্যগুলো পরীক্ষা করা উচিত।

তুলনা গ্রুপগুলো এমন একটি গ্রুপ যারা মূল্যায়নকালে আপনার প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করে না। আপনাকে তাদের থেকেও ডেটা সংগ্রহ করতে হবে। আপনি যদি আপনার প্রকল্পটি চালু না করতেন তবে কী ঘটতো তা খতিয়ে দেখার জন্য এটি আপনাকে সুযোগ করে দিবে। 

আপনার প্রোগ্রামকে প্রভাবিত করতে পারে এমন জিনিসগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে তুলনা গ্রুপগুলো সহায়তা করে। উদাহরণস্বরূপ, ফেসবুকে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি সহনশীলতা বৃদ্ধি করার জন্য আপনার কর্মসূচি চলাকালে কোনো ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্য স্থানীয় কোনো মেয়ের বিরুদ্ধে জঘন্য কোনো অপরাধ করলে কী হবে? খুব সম্ভবত এরূপ কাজ এবং এ নিয়ে মিডিয়ার আলোচনা ফেসবুকে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি অসহিষ্ণুতার মাত্রা বাড়িয়ে দেবে। এই ক্ষেত্রে, তুলনা গ্রুপ হবে আপনার কর্মসূচির ফলাফল পরিমাপের একমাত্র উপায়।

ফেসবুকের মাধ্যমে আমাদের কমিউনিটির সাথে যুক্ত থাকুন

সক্রিয় থাকুন এবং আমাদের ফেসবুক পেজের মাধ্যমে আমাদের বৃহত্তর কমিউনিটির সাথে যুক্ত থাকুন।

Go to Facebook